
নিজস্ব প্রতিবেদক :
নাটোরের লালপুর উপজেলার পদ্মার চরে রাতের আঁধারে আলী হোসেন (৪৫) নামের এক ক্ষুদ্র কৃষকের প্রায় ১০ শতাংশ জমির পেঁয়াজ তুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল (১০ ডিসেম্বর, ২০২৫) দিবাগত রাতে বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের পদ্মার চরে ঘটে এমন ঘটনা। কৃষক আলী হোসেন নিকটবর্তী বাঘা উপজেলার পানিকামড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই গ্রামের মৃত মসলেম উদ্দিনের ছেলে।
এ ব্যাপারে আলী হোসেন বলে, জীবিকার আশায় অন্য উপজেলার চরাঞ্চলে এসে বর্গাচাষে নিয়েছিলেন দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে প্রতিদিনের মতো ফসল দেখতে এসে দেখি ক্ষেতের প্রায় ১০ শতাংশ পেঁয়াজ চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
হতাশা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, গত বছর পেঁয়াজে ৮০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছিল। ভেবেছিলাম এবার ভালো দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারব। গতবারের লোকসান কিছুটা তুলতে পারব। কিন্তু যতটুকু লাভ হতো, সেই পেঁয়াজই তুলে নিয়ে গেল। এতে আমার প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হলো।
ক্ষোভ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমরা অন্য উপজেলা থেকে এসে এখানে চাষ করি। কিন্তু ফসলের কোনো নিরাপত্তা নেই। কাকে বলব, কোথায় বিচার চাইব? আমাদের মতো চাষিদের দুঃখ শোনার কেউ নেই।”
ঘটনার খবর পেয়ে বিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছিদ্দিক আলী মিষ্টু বলেন, বিষয়টি জানার পর গ্রাম পুলিশ পাঠিয়েছি। রাতের অন্ধকারে পেঁয়াজ তুলে নেওয়ার ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি।
এ বিষয়ে লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবর রহমান বলেন, এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নির্জন চরাঞ্চলে এভাবে ফসল চুরি হওয়ায় স্থানীয় চাষিরা আরও আশঙ্কায় পড়েছেন। কৃষি নির্ভর এসব মানুষের স্বপ্ন যদি বারবার এমনভাবে লুট হয়ে যায়—তবে তারা কীভাবে টিকে থাকবেন, সেই প্রশ্ন এখন ভেসে বেড়াচ্ছে পদ্মার চরজুড়ে।
উল্লেখ্য, গত ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে উপজেলা ভূমি অফিসের জানালা ভেঙে দুটি কম্পিউটারের মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি করে সংঘবদ্ধ চোরচক্র। এছাড়া ঐদিন (৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত আফানের ছেলে জালাল (৪০) ও আলাল (৩৫), মৃত ফেলুর ছেলে আয়নাল (৪৫), মৃত সেকেন্ডারের ছেলে সাগর (৪০) ও স্বাধীন (৩০) এবং মতিউর মোল্লার ছেলে মাইদুল ইসলামের (৪২) বাড়িতে চুরির চেষ্টা চালায় চোরচক্রের সদস্যরা। তবে অধিকাংশ বাড়ির লোকজন জেগে ওঠায় সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
কিন্তু রক্ষা হয়নি একই গ্রামের মৃত বারিক সরকারের ছেলে ঝন্টু সরকারের। সেদিন রাতে তার বাড়ি থেকে চার্জার ভ্যান চুরি করে নিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা। এলাকাবাসী জানান, গত ছয় মাসে ঐ গ্রাম থেকে সাতটি ভ্যান চুরি হয়েছে। এছাড়া ৩ ডিসেম্বর মঞ্জিলপুকুর এলাকায় সবজি ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নানকে ছুরিকাঘাত করে তার মূলধন ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। ১১ নভেম্বর লালপুর থানার গ্যারেজ থেকে থানায় কর্মরত বাবুর্চি মো. আমিরুল ইসলাম পারভেজের মোটরসাইকেল চুরি ও ১০ নভেম্বর লালপুর হলমার্কেট এলাকায় এক নারীর স্বর্ণের চেইন ছিনতাই হয়।
এ ছাড়া গত সাত মাসে উপজেলায় ব্যক্তিমালিকানাধীন ৩৪টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ২৬ লাখ টাকা।
ক্রমাগত এসব ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকালে এলাকাবাসী মাইকিং করে চোর শনাক্তে তথ্যদাতাদের জন্য আর্থিক ৫ হাজার পুরস্কার ঘোষণা করেন। ভুক্তভোগীরা জানান, অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি করেও সেভাবে ফল মিলছে না।
সম্পাদনা: রাশিদুল ইসলাম রাশেদ/উপসম্পাদক /প্রাপ্তি প্রসঙ্গ /১১-০১