শনিবার | ২৭ জুলাই, ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ, ১৪৩১

লালপুরে ৫৩৪তম কালীপূজা ও মেলা

আনোয়ারা খাতুন শেফালী, নির্বাহী সম্পাদক।।
নাটোরের লালপুরের বুধপাড়া কালী মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ৫৩৪তম কালীপূজা ও মেলা শুরু হচ্ছে।
রোববার (১২ নভেম্বর ২০২৩) দুপুরে বুধপাড়া মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমা নির্মাণের কাজ শেষে দিকে। রঙ-তুলিতে জীবন্ত রূপ নিচ্ছে। শেষ সময়ের সাজসজ্জায় ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা। মেলায় অস্থায়ী দোকানীরা বিভিন্ন দ্রব্যের পসরা সাজিয়ে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মন্দির কমিটির সভাপতি শতদল কুমার পাল বলেন, এ বছর উপজেলার ১৪টি মন্দিরে কালীপূজা অনুষ্ঠিত হবে। বুধপাড়া মন্দিরে কালীপূজা রোববার (১২ নভেম্বর ২০২৩) দিবাগত মধ্যরাতে শুরু হয়ে আগামী সোমবার (২০ নভেম্বর) প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। উপমহাদেশের প্রাচীনতম এই কালী পূজামন্ডপে ৯ দিন ব্যাপী দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীর উৎসবে প্রতিদিন দুই হাজারের অধিক দর্শনার্থী ও ভক্তদের মাঝে বিনা খরচে ভোগ বিতরণ করা হবে। পূজায় শতাধিক পাঠা বলি হয়ে থাকে।
মন্দির সূত্রে জানা যায়, নবাবী আমলে বর্গি হাঙ্গামায় ভারতের মুর্শিদবাদের বহরমপুর খাগড়া থেকে ৬০ ঘর কাঁসা শিল্পী বুধপাড়ায় বসতি গড়েন। তাঁরা বঙ্গাব্দ ৮৯৭ সালে (১৪৯০ খ্রি.) অর্থাৎ ৫৩৪ বছর আগে শ্রীষচন্দ্র চক্রবর্তীর দানকৃত জমিতে কালীপূজা অর্চনার জন্য মন্দির নির্মান করেন। বাংলা ১৩৩২ সালে জনৈক লাল কেনেডিয়ার স্ত্রী জানকী বাঈ-এর অনুদানে মন্দিরটি পাকা করা হয়। প্রতি বছর কার্তিক মাসে কালীপূজা ও সপ্তাহ ব্যাপী মেলা চলে। প্রবীণরা বলেন, ৫০/৬০ বছর আগেও এই মেলা এক মাস ধরে চলতো।
জমিদার পূণ্যচন্দ্র দাস দেড়’শ বছর আগে গোবিন্দ মন্দিরে প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমি দান করেন। সারা বছর মন্দিরে সকাল-সন্ধা আরাধনা, পূজা অর্চনা, হরিবাসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। পাক-ভারত উপমহাদেশের প্রাচীনতম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম এই মন্দিরে পূজা চলাকালীন শতাধিক পাঁঠা বলি হয়ে থাকে।
মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ মোহন সাহা বলেন, দুয়ারিয়া, মহেশ্বর, টিটিয়া, বুধিরামপুর, বৈদ্যনাথপুর, গোপালপুর ও গুরুদাসপুর মৌজায় মন্দিরের নামে প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমি রয়েছে। মন্দির চত্ত্বরের প্রায় আট বিঘা জমি ছাড়া সব বেদখল হয়ে আছে। সম্পত্তি উদ্ধারে মামলা চলছে।
মন্দিরের পৌরহিত শ্রী সুবোধ কুমার মজুমদার বলেন, কার্তিক মাসের অমবস্যা তিথিতে কালী পুজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। হিন্দু পূরাণ মতে, কালী দেবী দূর্গারই একটি শক্তি। সংস্কৃত ‘কাল’ শব্দ থেকে ‘কালী’ নামের উৎপত্তি। শুভশক্তির বিজয়ের এ দেবী শ্যামা, আদ্য মা, তারা মা, চামুন্ডি, ভদ্রকালী, দেবী মহামায়াসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। দীপাবলীর সন্ধ্যায় বাড়িতে ও শ্মশানে প্রদীপ জ্বালিয়ে স্বর্গীয় স্বজনদের স্মরণ করা হয়। শুভশক্তির বিজয়ের এ দেবীকে মধ্যরাতে বলির পশুর রক্ত, মিষ্টান্ন, অন্ন বা লুচি, মাছ ও মাংস উৎসর্গ করা হয়।
প্রতিমা নির্মাতা জোতদৈবকী গ্রামের শ্রী সুকুমার চন্দ্র হালদার (৬৩) বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই কালী প্রতিমার উচ্চতা ৩৩ ফুট। তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে এই প্রতিমা নির্মাণ করছেন। এতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৫ দিন। তাঁর সহযোগী ছেলে সনজিত চন্দ্র হালদার (৩৭) ছাড়াও রয়েছেন, বিনয় চন্দ্র হালদারের ছেলে বিধান কুমার হালদার (২২) ও বলায় চন্দ্র হালদারের ছেলে পুলক কুমার হালদার (১৭)।
তিনি আরও বলেন, এ বছর ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে ৪ জন মিলে প্রতিমা নির্মাণ করছেন। প্রতিমা নির্মাণ সামগ্রী উপযুক্ত মাটি, খড়, বাঁশ, রঙ ও সাজসজ্জা সামগ্রির দাম বেড়ে যাওয়ায় পারিশ্রমিকের টাকাও থাকে না। বর্তমান সময়ে একজন শিল্পীর উপার্জনের চেয়ে দিনমজুরের উপার্জন বেশি হয়।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, কালীপূজা ও মেলা উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপনে আইন-শৃঙ্খলা, মাদক প্রতিরোধ, ভ্রাম্যমান আদালত, নিরাপদ সড়কসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.