শুক্রবার | ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

লালপুরে যুবলীগ নেতা খাইরুল হত্যা: দীর্ঘ ১০ বছর পর মামলার রায়ের দিন ধার্য

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
দীর্ঘ ১০ বছর পর নাটোরের লালপুরে সাঈদীর রায় ঘিরে তাণ্ডবে যুবলীগ নেতা খাইরুল ইসলামকে (৩৭) হত্যা মামলার রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর ২০২৩) শুনানি শেষে আগামী ২৬ নভেম্বর মামলাটির রায়ের দিন ধার্য করেছেন রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালত। স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের সহায়তায় ২০১৮ সালে মামলার ‘মিসিং’ নথি উদ্ধার করে উচ্চ আদালত স্থিতাবস্থা তুলে নিলে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি আবার চালু হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘিরে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে তাণ্ডবে বাড়িতে হামলা করে তাঁকে হত্যা করা হয়।
নিহত খাইরুল উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পেশায় নিরাপত্তাপ্রহরী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির ছেলে জুবায়ের সপ্তম শ্রেণিতে ও মেয়ে খাদিজাতুল কুবরা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। তাঁর স্ত্রী লিপি খাতুন তিন মাসের সন্তানসম্ভবা ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আসলাম সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মঙ্গলবার আদালতে শুনানির সময় খাইরুলের স্ত্রী লিপি খাতুন ও তাঁর দুই সন্তান উপস্থিত ছিলেন। মামলার ৬৭ আসামির মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। একজন বিদেশে পালিয়ে গেছেন। দুজন অনুপস্থিত ছিলেন। বাকি আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী থেকে জানা যায়, খাইরুল ঘটনার দিন দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। বাইরে চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ শুনে তিনি ঘর থেকে বের হন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েকজন খাইরুলকে ঘিরে ধরেন। তাঁরা রামদা, চায়নিজ কুড়াল দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খাইরুলকে হত্যা করেন। খাইরুলকে বাঁচাতে তাঁর চাচা মজনু ও জলিল এগিয়ে এলে তাঁদেরও কোপানো হয়।
খাইরুলের স্ত্রী লিপি খাতুন বলেন, তাঁর স্বামীর মুখে দাড়ি ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। সেদিনও জোহরের নামাজ পড়ে এসে ভাত খেতে চেয়েছিলেন। তাঁর অপরাধ ছিল তিনি নৌকায় ভোট দিতেন। ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নামে ১০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র খুলে দেন। যার মুনাফা দিয়ে তাঁদের সংসার চলে। তাঁর ছেলে জুবায়ের হোসেন এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র। মেয়ে খাদিজাতুল কুবরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।
হত্যার ঘটনায় খাইরুলের ভাই শাহীনুর রহমান বাদী হয়ে লালপুর থানায় একটি মামলা করেন। দেড় বছরের মাথায় পুলিশ অভিযোগপত্র দেয়। ছয়জনের সাক্ষ্য শেষ হওয়ার পর ২০১৭ সালে আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে রিট করলে মামলাটি স্থগিত হয়ে যায়।
খায়রুল ইসলামের ছেলে জুবায়ের হোসেন বলেন, উচ্চ আদালতে মামলার স্থিতাবস্থা জারির পর ২০১৮ সালে নির্বাচনের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের মাধ্যমে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মামলার বিষয়ে খুলে বলেন। পরে জানা যায়, মামলার নথি ‘মিসিং’ হয়ে আছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও নথি পাওয়া যাচ্ছিল না। সংসদ সদস্য পরে তাঁদের নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে যান। তাঁর মাধ্যমে এক সহকারী রেজিস্ট্রারের চেষ্টায় দীর্ঘ দুই বছর পর নথি উদ্ধার হয়। পরে উচ্চ আদালত স্থিতাবস্থা তুলে নিলে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি আবার চালু হয়।
মামলার বিচার কার্যক্রম শুরুর পর থেকে আসামিপক্ষ মীমাংসা করার জন্য নানাভাবে চাপ দিয়েছে। বাদীকে বেশ কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করেছে। এরপর বাড়ি ছেড়ে তিনি ঢাকায় অবস্থান নিয়েছেন। বর্তমানে তাঁর পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.