নাটোর প্রতিনিধি :
নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন এ কে আজাদ শহীদ ওরফে সোহেল রানা (৪০)। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। হাসপাতালে ভর্তির পর আদালত তাঁর জামিন দেন। কিন্তু বাড়ি ফেরা হয়নি। ফিরে গেল তাঁর লাশ।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর ২০২৩) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
তিনি নাটোরের সিংড়া উপজেলার হাতিয়ান্দহ ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি এবং একই ইউনিয়নের ছোট হাতিদহ গ্রামের বাসিন্দা এ কে আজাদ শহীদ ওরফে সোহেল রানা। স্থানীয় একটি কলেজের প্রদর্শক ছিলেন।
সিংড়া থানা, নাটোর কারাগার ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, সিংড়া থানার ২৮ অক্টোবরের রাতের একটি নাশকতার মামলায় আবুল কালাম আজাদকে গত ১৮ নভেম্বর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে সিংড়া থানা-পুলিশ। পরদিন তাঁকে সিংড়া আমলি আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাঁকে নাটোর কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ৩০ নভেম্বর সিংড়া আমলি আদালত তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
জামিন পাওয়ার খবর জানাতে তাঁর স্ত্রী রমি বেগম নাটোর কারাগারে গিয়ে জানতে পারেন, কারাগারে ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় তাঁর স্বামী স্ট্রোক করেন। অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে কারাগার থেকে সন্ধ্যা ৭টা ৩৩ মিনিটে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে কারা কর্তৃপক্ষ। তাঁর স্ত্রী নাটোর সদর হাসপাতালে ছুটে যান স্বামীকে দেখার জন্য। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর স্বামীকে কারা কর্তৃপক্ষ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাতেই রামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পান আবুল কালাম আজাদ অচেতন অবস্থায় হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে আছেন।
নাটোর কারাগারের মাধ্যমে তাঁর জামিনের আদেশ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে ৩০ নভেম্বর রাতেই। কিন্তু কাগজপত্রের ত্রুটির কারণে তিনি ছাড়া পাননি। পরদিন হাসপাতালে মুক্তির কাগজ যখন পৌঁছায়, তখন তাঁকে আইসিইউতে ঢোকানো হয়। আট দিন আইসিইউতে অচেতন অবস্থায় থাকার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়।
রমি বেগম বলেন, তাঁর স্বামী কলেজে ডেমনস্ট্রেটর পদে চাকরি করেন। তিনি হাতিয়ান্দহ ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন। তবে কখনোই কোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতেন না। সিংড়া থানার যে মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাতে তাঁর নাম উল্লেখ ছিল না। সন্দেহমূলক গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আদালত জামিনও দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরতে পারলেন না। তাঁদের একমাত্র মেয়ে মেঘা খাতুন এবার এইচএসসি পাস করেছে।
অসুস্থতার বিষয়টি পরিবারকে না জানানোর বিষয়ে নাটোর কারাগারের জেলার মুশফিকুর রহমান বলেন, জেলকোড অনুসারে এমন কোনো বিধান নেই। তবে গুরুতর অসুস্থ হলে মানবিক কারণে জানানো হয়। এই আসামির জন্য জানানো হয়নি। তাঁরা আসামির অবস্থা গুরুতর বলে মনে করেননি।
রামেক হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মোস্তফা শেখ বলেন, হাসপাতালে আনার প্রথম দিন থেকেই সোহেল রানা আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। তিনি স্ট্রোক করেছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি মারা যান। পরে তাঁর মরদেহ বাড়ি নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা।
নাটোরের সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মশিউর রহমান জানান, কারাবন্দী আবুল কালাম আজাদকে ২৯ নভেম্বর রাতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছিল। রোগীর অবস্থা ভালো না হওয়ায় তাৎক্ষণিক তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে বলা হয়েছিল।