ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
রুশ পারমাণবিক আইসব্রেকার ‘৫০ লিয়েত পাবেদি’ (বিজয়ের ৫০ বছর) শুক্রবার (২২ আগস্ট) দশ দিনের উত্তর মেরু অভিযান শেষে বাংলাদেশীসহ ২১টি দেশের ৬৬ জন নির্বাচিত স্কুল শিক্ষার্থী রাশিয়ার মুরমানস্ক বন্দরে ফিরে এসেছে। ‘আইসব্রেকার অব নলেজ’ শীর্ষক এই ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক আর্কটিক অভিযানটি রাশিয়ার পারমাণবিক শিল্পের ৮০তম বার্ষিকী এবং উত্তর সমুদ্র পথ আবিষ্কারের ৫০০তম বার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে ।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রসাটমের সহায়তায় আয়োজিত এই অভিযানে ২১টি দেশের ৬৬ জন নির্বাচিত স্কুল শিক্ষার্থী অংশ নেয়। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ, মিশর, তুরস্ক, বলিভিয়া, কাজাখস্তান, চীনসহ অন্যান্য দেশ। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এই অভিযানে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন।
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এর বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার বেগুয়ার খাল গ্রামে। বাবা বাহার আলী বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে এবং মা মোছা. মর্জিনা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরিরত।
শুক্রবার রাতে ইত্তেফাক সংবাদদাতার সাথে রাশিয়ায় অবস্থানরত আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এবং অভিভাবক হিসাবে সাথে থাকা তার বাবা বাহার আলীর হোয়াটস অ্যাপে কথা হয়।
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের অনুভূতি জানতে চাইলে বলেন, এই প্রথম দেশের বাইরে এসেছি। পরমাণু শক্তিচালিত আইসব্রেকারে চড়ে উত্তর মেরু অভিযান শেষ করলাম। নিজের কাছে এত ভালো লাগছে যে তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। এই অভিযানে পরমাণু ও অন্যান্য বিষয়ে অর্জিত জ্ঞান ভবিষ্যতে দেশের কাজে লাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করব। অভিযান চলাকালে আমরা শীর্ষস্থানীয় পারমাণবিক ও মহাকাশ বিজ্ঞানীদের বক্তৃতা শোনার অনন্য সুযোগ লাভ করেছি। এমন বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয় যা শুধুমাত্র উত্তর আংশেই সম্ভব। পারমাণবিক আইসব্রেকারের নকশা ও কার্যক্রম সম্পর্কেও সম্যক ধারণা লাভ করেছি। এছাড়াও রসাটম ও রসকসমস ভূতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের জন্য ব্যবহারের লক্ষ্যে উত্তর মেরুর পরিবেশে উন্নত মোবাইল স্পেস রোভার প্ল্যাটফর্মের সরলীকৃত মডেল পরীক্ষা করা হয়।
মাহমুদের বাবা বাহার আলী বলেন, আমার ছেলে এবং আমি নিজে এখানে আসতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। আমার সন্তান বিশ্বের আরো ২০ টি দেশের ছেলেমেয়েদের সাথে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। যার জন্য আমি গর্বিত। আমি রোসাটমকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলছি, রাশিয়া জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত দেশ। এদেশের মানুষ ও ভৌগোলিক সৌন্দর্য নিয়ে আমার জানার খুব ইচ্ছে ছিল। এছাড়াও রাশিয়া বাংলাদেশের পাবনা জেলার রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যেটি আমার বাসার খুব কাছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনবে বলে আমি মনে করছি। সর্বোপরি, বৈশ্বিক রাজনীতি ও অন্যান্য বিষয়েও রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক গুরুত্ব বহন করে। এমন পরিস্থিতিতে আমি আমার ছেলের সাথে রাশিয়া ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মানুষ মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, জীবনে প্রথমবারের জন্য রাশিয়া সফর করছি। উত্তর গোলার্ধের এই দেশটি নিয়ে আমার কৌতুহল ছিল। বিশেষ করে পৃথিবীর বৃহত্তর দেশ, বছরের ছয়মাস দিন আর ছয়মাস রাত, বরফ আচ্ছাদিত প্রাকৃতিক পরিবেশ আমাকে বিমোহিত করেছে। জীবনে এমন সুযোগ পাব সেটা কখনো ভাবিনি। ছেলের সুবাদে এখানে আসতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত, যা ভাষায় বর্ণনা দেওয়ার মত নয়। এখানে আয়োজকদের আতিথেয়তা, বাইরের হালকা শীতল উপভোগ করার মত আবহাওয়া সবকিছু মিলেই এক অসাধারণ পরিবেশ। বাংলাদেশের বন্ধু প্রতিম দেশ রাশিয়া হওয়ায় আমরা খুব ভালো হসপিটালিটি পাচ্ছি। এছাড়াও এখানকার মানুষের রুচিবোধ, সামাজিকতা, মানবিক মূল্যবোধ আমাকে অভিভূত করছে। এই দেশটি শিক্ষা-সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ একটি দেশ। আমি চাই আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক আরো দৃঢ় হোক এবং পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও ভৌগোলিক অখন্ডতায় উভয় দেশ একসাথে কাজ করুক। আমি এব্যাপারে উভয় দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
প্রসংগত: মুরমানস্ক বন্দরে আগমনের পর রাশিয়ার জাতীয় পতাকা দিবস উপলক্ষে অংশগ্রহণকারীরা ‘৫০ লিয়েত পাবেদি’র ডেকে রাশিয়ান ত্রিবর্ণ পতাকা উত্তোলন করেন। ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতি বছর ২২ অগাস্ট রুশ পতাকা দিবস পালিত হয়ে আসছে। রাশিয়াই বিশ্বের একমাত্র দেশ যার পারমাণবিক চালিত আইসব্রেকার বহর রয়েছে। এই বহরটি রসাটমের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান এফএসইউই অ্যাটমফট পরিচালনা করে। বর্তমানে অ্যাটমফটের বহরে আটটি পারমাণবিক চালিত আইসব্রেকার রয়েছে। ছয়বার অনুষ্ঠিত এই অভিযানে চার শতেরও বেশি রুশ ও বিদেশী মেধাবী স্কুল শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে।