বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

বৈষ্ণব গোঁসাই আশ্রমে ৩২৬তম নবান্ন উৎসব

বৈষ্ণব গোঁসাই আশ্রমে ৩২৬তম নবান্ন উৎসব
আনোয়ারা খাতুন শেফালী, নাটোর প্রতিনিধি :
নাটোরের লালপুরের ফকির চাঁদ বৈষ্ণব আশ্রমে দুই দিনব্যাপী ৩২৬তম নবান্ন উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর ২০২৩) ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোঁসাইয়ের আবির্ভাব, তার জীবন চরিত্রের ওপর আলোচনা ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন, ৫৮ নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল।
উৎসবে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত ও সাধক সমবেত হন। এতে ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোঁসাইয়ের আবির্ভাব, তাঁর জীবন চরিত্রের ওপর আলোচনা, গীতা পাঠ অনুষ্ঠান ও সুধী সমাবেশ হয়। আশ্রম প্রাঙ্গণে ভক্তদের কলার পাতায় খিচুড়ি, পাঁচ তরকারি ও পায়েস বিরণ করা হয়। নি:সন্তান-বন্ধ্যা নারীরা অক্ষয় তলায় বটগাছের নিচে সদ্য স্নান শেষে ভেজা কাপড়ে বসে আঁচল বিছিয়ে সন্তান লাভের জন্য ভীখ মাংগেন।
আশ্রমের ৪৮তম প্রধান সেবাইত শ্রী পরমানন্দ সাধু বলেন, দুড়দুড়িয়ার নওপাড়া (রামকৃষ্ণপুর) গ্রামে বাংলা ১১০৪ সালে একটি বটগাছের নিচে আস্তানা গাঁড়েন ফকির চাঁদ বৈষ্ণব। তাঁতি পরিবারে জন্ম নেওয়া ফকির চাঁদ বৈষ্ণব ছিলেন অবিবাহিত। তার বাবার নাম নবকৃষ্ণ, মা যশমতি। তিনি এখানে ধ্যান-তপস্যা ও বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার শুরু করেন। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে দোল পূর্ণিমা, জ্যৈষ্ঠ মাসে গঙ্গা স্নান ও অগ্রহায়ণ মাসে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত সাধক সমবেত হন।
বাংলা ১২৭৪ সনে সাধু ফকির চাঁদ বৈষ্ণবের অদৃশ্য হওয়ার পর (বাংলাদেশের প্রথম গোঁসাই সমাধি বলে জানা যায়) আশ্রমটি কালের সাক্ষী হিসেবে বহন করছে গোঁসাইয়ের স্মৃতি। প্রায় ৪৫ ফুট উচ্চতার নিপুণ নকশা খচিত প্রধান ফটকে লেখা আছে ‘স্থাপিত ১১০৪ বাংলা’, অর্থাৎ আনুমানিক সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এটি নির্মিত। এখানে ৩২ বিঘা জায়গা জুড়ে রয়েছে ফলজ বৃক্ষ, পূজনীয় ফুলের গাছ ও শানবাঁধানো তিনটি সুবিশাল পুকুর।
আশ্রমের প্রবেশ পথে রয়েছে ময়ূর, বাঘ ও বিভিন্ন প্রাণির মূর্তি এবং লতা-পাতা কারুকার্য খচিত সুবিশাল ফটক। দ্বিতল এই প্রবেশ পথের ওপর তলাটি সাধারণত ব্যবহৃত হতো অতিথিশালা হিসেবে। কারুকার্য খচিত প্রবেশ পথের বাম পাশে বিশাল দিঘি। আখড়া প্রাঙ্গণে খালি পায়ে প্রবেশ করতে হয়। শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণবের বর্গাকৃতির ৪০ ফুট সমাধি সৌধে রয়েছে আরেকটি ৩০ ফুট গৃহ। এর একটি দরজা ছাড়া কোন জানালা পর্যন্ত নেই। মূল মন্দিরে শুধুমাত্র প্রধান সেবাইত প্রবেশ করেন। কাথিত আছে, মন্দিরের মধ্যে সাধু ফকির চাঁদ স্বশরীরে প্রবেশ করে ঐশ্বরিকভাবে স্বর্গ লাভ করেন। তাঁর পরিধেয় বস্ত্রাদি সংরক্ষণ করে সমাধি স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। গম্বুজ আকৃতির সমাধির উপরিভাগ গ্রিল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। ঘরের দেওয়াল ও দরজায় গাছ, লতা-পাতা খচিত কারুকার্য শোভা পাচ্ছে। ভেতরে রয়েছে ঝাড় বাতি। সোনা, রোপা ও কষ্ঠি পাথরে তৈরি মূল্যবান কারুকার্যগুলি চুরি হয়ে গেছে।
আশ্রমের মধ্যে রয়েছে বিশাল আকৃতির এক কুয়া। যার একটি সিঁড়ি পথ রয়েছে পাশের রান্না ঘরের সাথে সংযুক্ত। এই সিঁড়ি পথে সাধুরা রান্নাসহ পানিয় জল সংগ্রহ করতেন। বর্তমানে কুয়ার পানি ব্যবহার অযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। তার পাশেই রয়েছে ভক্তদের জন্য আরেকটি কুয়া। বড় বড় মাটির চুলায় রান্না হয় ভক্তদের প্রসাদ।
পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্রী সঞ্জয় কুমার কর্মকার বলেন, এই প্রাঙ্গনে ৩২ বিঘা ছাড়াও নওপাড়া, রাজশাহীর বাঘার সুলতানপুর এবং নওগাঁর আত্রাইয়ে আশ্রমের জমি রয়েছে।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.