শুক্রবার | ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

বাগাতিপাড়ার হাতপাখা তৈরি কারিগররা কর্মব্যস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর হাঁপানিয়া তালপাতার পাখাপল্লী হিসাবে পরিচিত। বর্তমান এ তালপাতার পাখাপল্লীর কারিগররা কর্মব্যস্ত। অনাবৃষ্টি ও সূর্যের তীব্র তাপ প্রবাহের  কারণে তালপাতার তৈরি হাতপাখার চাহিদা বেড়েছে। তাই কারিগররা কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন।

উপজেলার জামনগর ইউনিয়নে সবুজ বৃক্ষরাজির সুশীতল ছাঁয়ায় ঘেরা হাঁপানিয়া গ্রাম। এর এক অংশ তালপাখা পল্লী নামে পরিচিত। এ পল্লীর অর্ধশত পরিবার পৈত্রিক পেশা তালপাতার হাতপাখা তৈরি শিল্পে জড়িত।

গ্রীষ্মকালে তালপাতার তৈরি হাতপাখার বেশ কদর বাড়ে। তাল গাছের পাতা থেকে তৈরি হাত পাখার শীতল বাতাসে ক্লান্ত মন শান্ত হয়। বিদ্যুৎ শূন্য পরিবারে হাত পাখা পরম বন্ধু। প্রচন্ড দাবদাহ, ভ্যাপসা গরম ও বিদ্যুতের লোডশেডিং বেশি হলে হাতপাখার চাহিদা বাড়ে।

প্রতি গ্রীষ্ম মৌসুমে এ পল্লী থেকে ৪ লক্ষাধিক টাকা মূল্যমানের তালপাতার তৈরি হাতপাখা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। ব্যবসায়ি ও কারিগরদের স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চলে। এ পল্লীর প্রতি বাড়ির আঙ্গিনায় রৌদ্রে ছড়ানো-ছিটানো হাতপাখা তৈরির নানা উপকরণ।
এ পল্লীর প্রতিবাড়ির নারী-পুরুষ পাখা তৈরির কাজে সংপৃক্ত। পুরুষরা সংগ্রহকৃত তালপাতা কেটে পাখার আকার করেন। মেয়ে শিল্পিরা নিপূণ হাতে পাখার
বিভিন্ন কারুকার্য করেন।

এ পেশায় জড়িত আলাউদ্দিন ও রবিউল ইসলামের
বাড়িসহ বিভিন্ন বাড়িতে ও গোডাউনে তালপাতার তৈরি হাতপাখাগুলো শোভা পাচ্ছে। এগুলো চাহিদা মোতাবেক ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পর্যায়ক্রমে সরবরাহ করা হবে।

এই পল্লীর পাখা তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ি আলাউদ্দিন  জানান, চাঁপাই-নবাবগঞ্জ ও নঁওগা থেকে ছোট তাল গাছের পাতা সংগ্রহের পর রৌদ্রে শুকিয়ে পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়। কিছুদিন পর ভেজা নরমপাতা গোলাকার করে কেটে মাঝখানে দূ’খন্ড করা হয়।

এ পল্লীর আলাউদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, নাজিম উদ্দিন, হানিফ আলী,শামীম উদ্দিন,সাজেদুর রহমান ও মকলেসুর রহমান তালপাখা তৈরির উপকরণ সংগ্রহ ও পাখা সরবরাহের কাজ করেন।

আলাউদ্দিন জানান, চাঁপাই-নবাবগঞ্জ ও নঁওগা থেকে ছোট তাল গাছের পাতা সংগ্রহের পর রৌদ্রে শুকিয়ে পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়। কিছুদিন পর ভেজা নরমপাতা গোলাকার করে কেটে মাঝখানে দূ’খন্ড করা হয়।

প্রতি পাতা থেকে দূ’টি পাখা তৈরি হয়। পাতা সংগ্রহসহ প্রতি পিচ পাখার তৈরিতে খরচ হয় ১৬ টাকা থেকে ১৮ টাকা। এগুলো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়  পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করা হয়। বর্তমান প্রতি পিচ পাতপাতার হাতপাখার পাইকারি  মূল্য ২৮টাকা থেকে ৩০টাকা। তিনি আরো জানান, তাঁরা স্বামী-স্ত্রীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও পাখা শিল্পে সংপৃক্ত। এই পৈতৃক পেশায় স্বাচ্ছন্দ্যে তাঁদের সংসার চলে।

মিনারা বেগম(৬০)’ শিরিনা বেগম(৩০), হাওয়া বেগম (৩৫) ও সুফিয়া বেগম (৫৫) সহ অসংখ্য নারী কারিগর তালপাতার হাতপাখার তৈরি কাজে জিড়িত।
এরা সংসারিক কাজের পাশাপাশি পাখা তৈরি কাজ করেন।

মিনারা বেগম (৬০) পা ভেঙ্গে যাওয়ায় দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ। প্রতিদিনের  ঔষধের খরচের জন্য তিনি অতি কষ্টে পাখা তৈরির কাজ করেন। তিনি প্রতিদিন ৫০থেকে ১শ’ হাতপাখার কারুকার্য করেন। প্রতিশত পাখার তৈরি গড় মজুরি  ১শত টাকা।

পাখা শিল্পী দুই সন্তানের জননী  হাওয়া বেগম  সংসারিক
কাজের পাশাপাশি তালপাতার পাখা ছাঁটা ও কাঁপা দেবার কাজ করেন। তিনি প্রতিদিন তিনি ১শ’ থেকে দেড়শ’
পাখা ছাঁটা ও কাঁপা দিয়ে দেড়শ’থেকে ২শ’ টাকা আয় করেন।

জামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী জানান, হাঁপানিয়া পাখা পল্লীর নারী-পুরুষ খুব
পরিশ্রমী। তাঁরা পৈতৃক পেশা টিটীহডশোকিয়ে রাখতে সচেষ্ট। গ্রীষ্ম মৌসুমে তালপাতার তৈরি হাতপাখার চাহিদা বেশি থাকায় পাখা শিল্পে সংপৃক্তরা ব্যস্ত থাকেন। এ পল্লীর শিল্পীদের নিপূণ হাতে তৈরি হাতপাখার দেশব্যাপী চাহিদা রয়েছে।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.