নিজস্ব প্রতিবেদক :
ইস্ট লন্ডনের ফোর্ড স্পোর্টস এবং সোশ্যাল ক্লাব প্রাঙ্গনে এক সাস্টিয়ান ফ্যামিলি গেট টুগেদার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত রোববার (২৭ জুলাই ২০২৫) সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘সাস্টিয়ান ইউকে ফাউন্ডেশন’ এর উদ্যোগে ইউকে জুড়ে প্রায় দেড় শ সাস্টিয়ান ও তাদের পরিবারের অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠান এক মিলন মেলায় পরিণত হয়।
সাস্টিয়ান ইউকে ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর কামরুল ইসলাম কাবেরীর শুভেচ্ছা বক্তব্যে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচ থেকে সর্বশেষ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারবর্গ নিজেদের পরিচয় তুলে ধরে অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
ফুটবল, ক্রিকেট, মোরগ লড়াই, গান, নাচ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এবং অনেক দিন পর পুরোনো বন্ধুদের পেয়ে অনুষ্ঠানটি দেশের বাইরে সুদুর বিলেত হয়ে উঠে এক টুকরো সাস্ট।
সাস্টিয়ান সাংবাদিক সাজু আহমেদ তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করে লিখেছেন, অনুষ্ঠানের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট (এক নজরে দেখা!)। যা হুবহু তুলে ধরা হলো-
কলমে যা আসছে তাই লিখছি। তাই অনেক জিনিস, অনেক ছোট ভাইবোনদের নাম বাদ যাবে, তাই প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর:
এবারের অনুষ্ঠানে আমাকে (এবং আরো অনেক সিনিয়রকে) অনেক কম চেয়ার টানাটানি, টেবিল সেট আপ, বিকালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কম করতে হয়েছে (যদিও তৌহিদ ভাইয়েরা রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত ছিলেন)। কারণ আমাদের নতুন প্রজন্মের সাস্টিয়ানরা সে দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন। এটা ছিল এবারের অনুষ্ঠানে প্রথম আশা জাগানিয়া পর্যবেক্ষণ।
২০১০ সালের দিকে কাবেরী ভাই, তৌহিদ ভাই, রাজ্জাক ভাই, বেলাল ভাই, জামান ভাইদের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার যে মানসিকতা দেখেছিলাম (এমনকি শারীরিক পরিশ্রম), আমরা নতুনেরা তাদের কাছ থেকে যে জিনিসটা শিখেছিলাম, সে জিনিসটা সয়ংক্রিয়ভাবে ট্রান্সফার হয়ে গেছে আমাদের পরবর্তী জেনেরেশনে।
আমরা যে মায়া, মমতা, স্নেহ, ভালোবাসা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আমাদের বাংলাদেশী সমাজ, সংস্কৃতি, পরিবার এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিখেছি, তা এখনো ধরে রাখতে পেরেছি। যেটা বিলেতের অনেক সংগঠনে দেখা যায় না। এর চেয়ে আর কি সুখের হতে পারে ভাই, বোন ও বন্ধুরা! আমরা বিলেতি সংস্কৃতি (জামাই ৫০ আর বউ ৫০, এক সাথে দুইটা পানির গ্লাস থাকলে বড় মেয়ে তারটা কিচেনে নিবে, ছোট বোনেরটা নিবে না, কারণ ৫০/৫০!) তে অভ্যস্ত হইনি এখনো!!
আমাদের দিন শেষ:
সিনিয়র যারা ফুটবল ও ক্রিকেট খেলেছেন তারা বুঝতে পেরেছেন, চাচার দিন শেষ, ভাতিজাদের দিন শুরু! যে ফাহিম, রাজীব আর রাজ্জাক ভাইদের মতো প্রফেশনাল নিয়মিত খেলোয়াড়দের ভয়ে ক্রিকেট খেলায় নামই দেইনি, তাঁরাও দেখা গেলো আমাদের ছেলে ও ভাতিজাদের কাছে অসহায়! আমাদের ছেলেদের কাছে পরাজয়, আমাদের ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়া, এর চেয়ে আর কি সুখের হতে পারে! ফুটবলে তো বুড়োদের অবস্থা আরও খারাপ!!
সময়ের ব্যবহার এর সুযোগ:
যারা আয়োজনে ছিলেন তারা ৯টা থেকে উপস্থিত কিন্তু আমরা বেশিরভাগই ছিলাম একেবারে বেখেয়াল! সময় মত এসে আমরা সময়কে কাজে লাগিয়ে নেটওয়ার্কিংয়ের বিশাল সুযোগ ছিল কিন্তু আমরা সেই সুযোগ অনেকেই নিতে পারিনি। আমরা দেরিতে যাওয়ার বাজে সংস্কৃতি বাদ দিয়ে সময়মত আসার ভালো বিলেতি সংস্কৃতি গড়ে তোলা উচিত। তবেই অন্য সংগঠনগুলো আমাদের অনুসরণ করবে। ভাগ্য ভালো, আবার আমরা কোন টিভি ক্যামেরা দাওয়াত দেইনি, না হলে দুপুর ১২টায় এসে দেখতেন পুরো হল খালি!!
আমাদের স্পন্সরেরা:
আমাদের অনুষ্ঠানের রসদ যোগান আমাদের স্পনসররা। নিঃশর্তভাবে কাউকে বললে, কেউ না করেন না। কিন্তু তিনজন স্পন্সরের কথা না বললেই নয়। সুইনডন প্রবাসী সাস্টিয়ান কুতুব ভাই আর স্কটল্যান্ডের সাস্টিয়ান মতিন ভাই। তাঁরা হয়তো দূর অথবা অন্য কমিটমেন্টের কারণে প্রোগ্রামে আসেন না। কিন্তু স্পন্সরের কথা বললে এক পায়ে খাড়া থাকেন, আসবেন না বলে কোন অজুহাত দাঁড় করান না। আর অনেক দূরের শহর ব্রাডফোর্ড এর সলিসিটরস আনসার ভাই শুধু স্পনসর নয়, সশরীরে উপস্থিত হন প্রোগ্রামে। আর রাজ্জাক ভাই, তৌহিদ ভাই, আখলাক, বেলাল ভাই, শাফিন ভাই, ব্যারিস্টার আশরাফ ভাই, বাবলু (জালাল), সায়মন, ফাহিম, রাজীব, শিপন ভাই, ড. মুজিব ভাইসহ আরও যারা স্পনসর আছেন তাদের কারণে আমাদের অনুষ্ঠানের জৌলুশ বাড়ে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই।
অনুষ্ঠানে জুনিয়ররা সবাই ছিল ষ্টার! তাই কারও নাম বলছি না! তবে খাদ্যমন্ত্রী আবুল ভাই, জাভেদ ভাই ও তৌহিদ ভাইয়ের রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত অমানুষিক পরিশ্রম, সাফিন ভাইয়ের স্টেজ ও সকালে ভেন্যু সাজাতে দৌড়াদৌড়ি, সালামের ব্যতিক্রমধর্মী উপস্থাপনা ও নয়েজ কন্ট্রোল, ইকবাল ও শাহনাজের যৌথ প্রযোজনা, বন্ধু সঞ্জিতের খেলা মাতিয়ে রাখা ও রবির অসাধারণ খেলার আয়োজন আমার চোখ এড়াতে পারেনি। অপু, বুলবুল, নাঈম, কাকে ছেড়ে কার কথা বলবো…।
কমিউনিটিতে নেতৃত্ব দানের সুযোগ:
আমি সাংবাদিক হিসেবে বিলেতের অনেক সংগঠনের অনুষ্ঠানে যাই কিংবা প্রেস কনফারেন্স এ অংশহগ্রহন করি। কিন্তু অনেক সংগঠনের সেক্রেটারি কিংবা সভাপতি অনেকেই স্কুলের বারান্দা পেরুলেও কলেজের ধারের কাছেও যাননি। আর বিশ্ববিদ্যালয়তো দূরের কথা। কিন্তু আমাদের সদস্যারা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট! (গর্ব করছি না কিন্তু এটাই সত্য!)। তাই এই বিলেত কমিউনিটিতে আমাদের সুযোগ কিন্তু অফুরন্ত। যদি আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরী করতে পারি।
আবার ও দেখা হবে, কথা হবে!!