প্রাপ্তি প্রসঙ্গ ডেস্ক।।
নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া উত্তরা গণভবনসংলগ্ন এলাকায় ব্যতিক্রমী এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিয়েবাড়িতে সবাই যখন নানা পদের খানাপিনা ও হইহুল্লোড়ে ব্যস্ত, বর-কনে তখন রোপণ করছিলেন গাছ। দেনমোহর বাবদ কনের হাতে বর ছয়টি ফলদ ও বনজ গাছের চারা। এ গাছই সম্পর্কের সেতুবন্ধন হওয়ায় বর-কনে দুজনেই মহাখুশি।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর ২০২৩) কনের বাবা সংস্কৃতিকর্মী এম আসলাম লিটনের ফেসবুকে মেয়ে-জামাতার জন্য আশীর্বাদ চেয়ে পোস্ট দেওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। গত শুক্রবার (২০ অক্টোবর) তাঁর বাড়িতেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়।
খবর জানার পর এম আসলাম লিটনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আঙিনায় আম, লিচু, মেহগনি ও অর্জুনগাছের ছয়টি চারা রোপণ করা হয়েছে। মেয়ে সুকৃতি আদিত্য ও জামাতা নাবিন আদনান চারাগুলোর পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত। হাসিমুখে দুজন মিলেই গাছে পানি দিচ্ছেন। নিরাপত্তার জন্য দিচ্ছেন বেড়া। তখনো অতিথি ও স্বজনদের আনাগোনায় বাড়ির ভেতরটা জমজমাট।
বর-কনের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, সুকৃতি আদিত্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগ থেকে আর কুমিল্লার বাসিন্দা নাবিন আনদান একই অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। নাবিন এখন ঢাকায় শিল্পনির্দেশক হিসেবে কাজ করছেন। বছর ছয়েক আগে তাঁরা পূর্বপরিচয় থেকে ভালোবাসার বন্ধনে জড়ান। পরে দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন।
সুকৃতি আদিত্য বলেন,
বর্তমানে অনেক বিয়েতে দেনমোহর নিয়ে যে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতাটা চলছে-আমার মনে হয় তা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। কারণ বিয়েতে আর্থিক লেনদেনটা মুখ্য না। দুটি মানুষের মনের মিল হওয়াটাই বড় ব্যাপার। বিয়েতে দেনমোহর নিয়ে তাঁর তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। তবে মুসলমানদের বিয়ের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ এটি। তাই নগদ অর্থ বা গয়না নিয়ে তিনি দেনমোহর উশুল করতে চাননি। বরং এমন কিছু নিতে চেয়েছেন, যা অনেক দিন তাঁদের বন্ধনের প্রতীক হয়ে টিকে থাকবে। গাছের চেয়ে ভালো ‘প্রতীক’ আর কিছু হতে পারে না। তাই তিনি মোহরানা হিসেবে ছয়টি গাছ চেয়েছিলেন। এতে ভীষণ খুশি। দুজনের পরিচর্যায় গাছগুলো বেড়ে উঠবে। অক্সিজেন বাতাসে মিশবে। পরিবেশ সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি সম্পর্কও আরও মজবুত হবে।
নাবিন আদনান বলেন, উপহার হিসেবে তাঁর হাতে গাছ তুলে দিতে পেরে আমিও খুশি। আমাদের ভালোবাসা গাছের মাধ্যমে অক্সিজেনের রূপে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে যাবে। এর চেয়ে আনন্দের বিষয় কী হতে পারে। আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের নিরাপত্তার চাইতে পরিবেশের নিরাপত্তা বেশি জরুরি। এক ধরণের দৃষ্টান্ত হিসাবেই আমরা চর্চা করলাম যাতে আমরা পরিবেশ, প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে থাকতে পারি। সুকৃতির ভিন্ন চিন্তাকে স্যালুট জানাই।
কনের বাবা এম আসলাম লিটন বলেন, মোহরানা হিসেবে জামাতা গাছকে বেছে নেওয়ায় তিনি ও তাঁর স্ত্রী সুস্মিতা অনেক খুশি হয়েছেন। গ্রামবাংলায় মেয়ের বাবা-মায়েরা নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অধিক দেনমোহর আদায়ের কথা ভাবেন। কোনো অর্থনৈতিক বা সম্পদের জায়গায় গিয়ে চুক্তিবন্ধ হওয়ার চাইতে আত্মার চুক্তিবদ্ধ হওয়া বেশি জরুরি। সেই জায়গাটা সুকৃতি অনুভব করেছে। তার মেয়ে এমন ব্যতিক্রম একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বাবা হিসাবে তিনি গর্বিত।
স্থানীয় বাসিন্দা গুলজান বেগম জানান, তার জীবনে এমন ব্যতিক্রমী বিয়ে দেখেননি। বিয়ে বাড়িতে এসে বর-কনের গাছ লাগানো দেখে তার খুবই ভাল লেগেছে। নতুন দম্পতি সুখে শান্তিতে থাকুক এমন শুভকামনা জানান তিনি।
সাংস্কৃতিকর্মী সৈয়দ মাসুম রেজা বলেন দেনমোহরে সবসময় কনেপক্ষকে টাকার অংক বাড়াতে দেখেছি। কিন্তু সুকৃতির বিয়েতে ব্যতিক্রম চিন্তা চেতনা অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপ্য।
দিঘাপতিয়া অনার্স কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিয়েতে সুকৃতির মোহরানা হিসেবে গাছ উপহার নেওয়ার কথাটি জেনে আনন্দিত হয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শহরের সবাই ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। নবদম্পতির জন্য শুভকামনা জানান তিনি।