লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ১২ বিএনপি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে ফেরার পথে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
রোববার (২৯ অক্টোবর ২০২৩) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে অভিযান চালিয়ে উপজেলার পালিদেহা বাজারের পাশে ব্রিজের নিকট থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. উজ্জল হোসেন বলেন, সরকার বিরোধী প্রচারণা, বিভিন্ন ধরণের সরকার বিরোধী সন্ত্রাসী কার্যক্রম, নাশকতা করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংস ও দেশের মধ্যে ভীতি এবং আতংক সৃষ্টি করার লক্ষে সমবেত হওয়ায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন এর ১৫(১)/১৫(৩) ধারার থানায় মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে নাটোর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার দক্ষিন লালপুর গ্রামের মৃত তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে লালপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হারুনার রশিদ পাপ্পু (৫৩), তিলকপুর গ্রামের মৃত মসলেম উদ্দিনের ছেলে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. আব্দুস সালাম (৫৩), পালিদেহা গ্রামের মৃত মানিক উদ্দিন প্রাংয়ের ছেলে মো. ইমরান হোসেন (৪২), গৌরিপুর গ্রামের মো. আবুল হোসেনের ছেলে নাটোর জেলা ছাত্রদলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল উদ্দিন (২৯), নুরুল্লাপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. রায়হান কবির সুইট (২৮), ভেল্লাবাড়ি রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে মো. সুমন ইসলাম (৩০) ও আব্দুল রশিদ ঘোষের ছেলে মো. চঞ্চল আহমদ (৩০), উত্তর লালপুর গ্রামের মো. বেলাল আলীর ছেলে মো. সোহানুর রহমান সোহান (২৩), ওয়ালিয়া বাগপাড়া গ্রামের মৃত রিয়াজ উদ্দিন মন্ডলের ছেলে মো. শকুর আলী (৫০) ও মৃত রহমত আলী সরদারের ছেলে মো. খাইরুল ইসলাম (৫৮), ফুলবাড়ী গ্রামের মো. আব্দুস সালামের ছেলে মো. নুরে আলম সিদ্দিক (৪৮) এবং ওয়ালিয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (৫০)। গ্রেপ্তারকৃত মো. সাইফুল ইসলাম সামান্য অসুস্থ হলে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
লালপুর থানা সূত্রে জানা যায়, রোববার (২৯ অক্টোবর ২০২৩) ভোর ৫টার দিকে বিএনপি-জামায়াতের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল উপলক্ষে নিরাপত্তা মূলক ডিউটিকালীন গৌরিপুর মোড়ে অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, হরতাল উপলক্ষে বিএনপি-জামায়াতের বেশ কিছু নেতাকর্মী পালিদেহা বাজারের পাশে লালপুর-ঈশ্বরদী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাকা রাস্তা ব্রীজের উপর রাস্তায় চলাচল যানবাহন চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি, জনগণের জানমালের ক্ষতি করা ক্ষতি করা এবং সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র করে অন্তর্ঘাত মূলক কার্যক্রম পরিচালানর উদ্দেশ্যে অবস্থান করছে। সংবাদের ভিত্তিতে লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. উজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে সঙ্গীয় এসআই (নিঃ) মো. রেজাউল করিম, হাসান তৌফিকুল ইসলাম, মো. লেবু মিয়া এএসআই (নিঃ) মো. মেহেদী হাসান, মো. ইউসুফ আলী চৌধুরী, মো. শাহীনুর রহমান, মো. আশরাফ আলী, কনস্টেবল মো. সাইফুল ইসলাম, মো. সেলিম রেজা, মো. আমিনুল ইসলাম, মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. টুটুল হোসেন, ড্রাইভার মো. মাসুদ রানা ও মো. আমির হোসেন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেন। এ সময় পলাতক এজাহার নামীয় ১০ জনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২৫/৩০ জন ব্যক্তি পালিয়ে যায়। যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২২টি বাঁশের লাঠি, বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের সরকার বিরোধী ১০টি পোস্টার উদ্ধার করে।
গোপালপুর পৌর বিএনপির আহবায়ক নজরুল ইসলাম মোলাম বলেন, রাতে ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে ফেরার পথে কোন প্রকার ওয়ারেন্ট ছাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হারুনর রশিদ পাপ্পুসহ ৮ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাড়িতে রাতভোর পুলিশ তল্লাশি করেছে। এ সময় ওয়ালিয়া ইউনিয়নের ৪ জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। বর্তমানে বিএনপির নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া বলে তিনি দাবি করেন।
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ইয়াসির আরশাদ রাজন বলেন, মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে। দলের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান তিনি।
বিএনপির মানবধিকার বিষয়ক কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল বলেন, ঢাকার পল্টনে অনুষ্ঠিত শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে যোগদান শেষে লালপুরের উদ্দেশ্য তারা যাত্রা করেন। রাত ১টার সময় মুঠোফোনে ঈশ্বরদী বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি থামলে সেখান থেকে ডিবি পুলিশ তাঁদের আটক করে রাতেই লালপুর থানায় সোপর্দ করে বলে জানতে পারেন। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় গায়েবি ঘটনা সাজিয়ে গায়েবি মামলা করে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের নির্যাতন করে আসছে সরকার। এই ঘটনা তার-ই পুনরাবৃত্তি।
লালপুরের এক ব্যক্তি ঢাকায় বাসে আগুন দিয়ে পালাতে গিয়ে মৃত্যু:
এদিকে পুলিশ জানায়, নাটোরের লালপুরের আব্দুর রশিদ (৩৮) নামে এক ব্যক্তি বিএনপি-জামায়াতের হরতালের মধ্যে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে বাসে আগুন দেওয়ার পর স্থানীয়দের ধাওয়ায় নির্মাণাধীন এক ভবনের ছাদে গিয়ে উঠেছিলেন। তারপর সেখান থেকে পালাতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়।
রোববার (২৯ অক্টোবর ২০২৩) বেলা ১২টার দিকে মোহাম্মদপুরে জাকির হোসেন রোডের একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে গিয়ে আব্দুর রশিদ মারা যান।
মৃত আব্দুর রশিদ উপজেলার চংধুপইল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড নাগদহ গ্রামের মৃত মো. খলিল সরদারের ছেলে। তিনি ঢাকার আদাবর থানা বিএনপির ৩০ নং ওয়ার্ড বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি আদাবর থানার সাবেক যুবদল নেতা ছিলেন। তিনি আদাবরে স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে সুনিবিড় হাউজিংয়ে ভাড়া থাকতেন।
জানা যায়, সকাল ১০টার দিকে আসাদ এভিনিউয়ে মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের কাছে ‘পরিস্থান পরিবহন’ এর একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছিলেন রশিদ। আগুন দেওয়ার পর রাস্তার লোকজন ধাওয়া দিলে তিনি জাকির হোসেন রোডের একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে গিয়ে ওঠেন। ওই ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পালাতে গিয়ে মৃত্যু হয়।
বাসে আগুন দেওয়ার ওই ঘটনায় দুই যাত্রী দগ্ধ হন। তাদেরকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনিস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। আগুনে ওই বাসের সবগুলো সিট পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়।
আ.লীগের বিরুদ্ধে ছাদ থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগ:
ঢাকা উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক গণমাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদ মারপিটের পর বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, রোববার (২৯ অক্টোবর) সকালে হরতালের সমর্থনে মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় মিছিল শেষে বাসায় ফিরছিলেন আব্দুর রশিদ। ফেরার পথে আওয়ামী লীগের সশস্ত্ররা পুলিশের সামনে আব্দুর রশিদকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে এবং একটি নির্মানাধীন বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করে।
মরদেহের ময়না তদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়েছে।