নাটোর প্রতিনিধি :
নাটোরের লালপুরে ‘মৌমাছি ও মধু’ চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্প্রতি (শনিবার ৩ ডিসেম্বর ২০২৩) উপজেলার গ্রিন ভ্যালি পার্কে এই উৎসবের আয়োজন করে দেশের মৌয়াল, চাষি, বণিক, গবেষক ও ভোক্তা জাতীয় জোট।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. ওমর আলী। তিনি বলেন, আপনাদের মধুর কোয়ালিটির সঙ্গে আপস করা চলবে না। তা করলে শাস্তির ব্যবস্থাও থাকা দরকার।
জোটের আহ্বায়ক মো. আকমুল হোসেন মাহমুদ বলেন, ২০১৯ সালে এর যাত্রা শুরু হয়েছে। এই জোটের সদস্য প্রায় ২০ হাজার। এই জোট প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মৌমাছি ও মধু বিষয়ক সচেতনতা, সমাজে প্রচলিত মধু বিষয়ক ভুল ধারণা দূরীকরণ এবং গবেষক, চাষি, উৎপাদক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তার সেতুবন্ধন ও সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী, সভা-সেমিনার, মধু মেলা, সুন্দরবনে হানি ট্যুরিজম ইত্যাদি ফলপ্রসূ কার্যক্রমের আয়োজন করে আসছে। উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশীয় মধুর সঠিক বিপণন, বেকারত্ব দূরীকরণ ও অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা পালন করছে।
অনুষ্ঠানে দেখা যায়, সবার মুখে মধুমাখা পানের খিলি। নানা মসলার সঙ্গে মধু দিয়েই পান সাজা হচ্ছে। চিনির বদলে মধু দিয়ে চা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বৈজ্ঞানিক, কীটতত্ত্ববিদ, বিচারক, মৌয়াল, চাষি, ভোক্তারা বক্তব্য দেন।
তাঁরা বলেন, শর্করা ছাড়াও মধুতে আছে কয়েক প্রকার এনজাইম যা প্রাণিকোষসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। মধুতে ডায়াস্টেড ইনভারটেজ, স্যাকারেজ, ক্যাটালেজ, পারঅক্সিডেজ, লাইপেজের মতো এনজাইম থাকে। অন্য খাদ্যের তুলনায় মধু স্বাস্থ্যকর। দেশে প্রতিবছর ১৫ হাজার টন চাষের মধু উৎপাদিত হয়। আর সুন্দরবন থেকে আসে ৬০০ টন। মধু দিবস, মধুবর্ষ ঘোষণার পাশাপাশি মধুর ব্র্যান্ডিং করলে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাবে। গাজীপুরের এবাদুল্লাহ আফজাল বলেন, তিনি বছরে ৯০০ টন মধু বিদেশে রপ্তানি করেন।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মৌয়াল মুক্তার হোসেন গাজী (৪৮) বলেন, তিনি ৯ বছর বয়স থেকে সুন্দরবনে মধু আহরণ করেন। এক দিনে ১২ জন মিলে চার মণ মধু ভেঙেছেন। এরপর শুনালেন লোমহর্ষক কাহিনী, ‘১৯৯০ সালের কথা। সুন্দরবনের নদী চুনকুড়িতে আমাকে বাঘে ধরল, পানিতে ডুবে গেলাম। বাঘ তা-ও ছাড়েনি। ওপর থেকে সবাই খুঁজছে। কেউ দেখতে পাচ্ছে না। কারণ, আমরা ডুবে আছি। থাবা দিয়ে আমাকে ধরে আছে। আমার তখনো হুঁশ আছে যে আমাকে বাঘে ধরেছে। আমি ছোটার চেষ্টা করি, বাঘ আরও চেপে ধরে। আমি নদীর মাঝবরাবর ডুব দিই। একসময় বাঘ আমাকে ছেড়ে দিল। কীভাবে দিল, জানি না। এটা আল্লাহর কুদরত। সারা গা বাঘের থাবায় ছিলে গেল। ছয় মাস লাগল ঘা শুকাতে। তাই ওই ছয় মাস যাতি পারিনি। তার পর থেকে আবার যাচ্ছি।’
আলোচনা পর্ব শেষে প্রীতি ফুটবল ম্যাচে বুনো মৌমাছি ও চাষের মৌমাছি দল ১-১ গোল করে। রেফারি চট্টগ্রামের সৈয়দ মো. মঈনুল আনোয়ার দুই দলকেই বিজয়ী ঘোষনা করেন। উভয় দলের হাতে তুলে দেওয়ার পর চট্টগ্রামের আলওয়ান মধু জাদুঘর ও গবেষণাকেন্দ্রে তা রাখার সিদ্ধান্ত হয়।