শুক্রবার | ১৮ অক্টোবর, ২০২৪ | ২ কার্তিক, ১৪৩১

২০০ পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র মুদি দোকানিকে কুপিয়ে হত্যা

নাটোর প্রতিনিধি :
নাটোরের লালপুরে মুদি দোকানের ২০০ পাওনা টাকা (বাঁকী) চাওয়াকে কেন্দ্র করে মো. ছালাম শাহ (৪৫) নামে দোকানীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪) দিবগত রাত ১টার দিকে উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়নের চৌষডাঙ্গা (পূর্বপাড়া) গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ছালাম শাহ (৪৫) চৌডাঙ্গা গ্রামের ইয়াজ উদ্দিন শাহের ছেলে।
এ ঘটনায় নিহতের ভাতিজা মো. ছলেমান শাহের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম (৩৫) বাদি হয়ে একই গ্রামের আসামী মো. আব্দুল মজিদের ছেলে মো. সাহেব আলীর (৩৫) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে নাটোর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
লালপুর থানা ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, মো. সাহেব আলী দীর্ঘ দিন ধরে নিহত ছালামের চা ও মুদি দোকানে বাঁকীতে বিভিন্ন মালামাল নিতেন। দোকানের বাঁকী মাত্র ২০০ টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে দুজনের মধ্যে সোমবার সন্ধ্যা রাতে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় সাহেব আলী ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়ি চলে যান। যার জের ধরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
মামলার বাদি নিহতের ভাতিজা মো. ছলেমান শাহের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম জানান, নিহত ছালাম শাহ তার আপন চাচা। চৌষডাঙ্গা (পূর্বপাড়া) গ্রামস্থ কবরস্থানের পাশে চৌষডাঙ্গা-বনপাড়াগামী রাস্তার পাশে চায়ের দোকানের ব্যবসা করেন। ব্যবসার সুবাদে তার চাচা (ছালাম শাহ) দোকানেই রাতে শুয়ে থাকেন। আসামী তার দোকানে খাওয়ার টাকা বাকী রাখেন। এই বাকী টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে ৭/৮ মাস পূর্বে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। সে সময় আসামী বলেন, ‘তোর টাকাও দিব না, তোকে শিক্ষা দিব, সুযোগ পেলে তোকে খুন করবো।’ এরই জের ধরে সোমবার (৩০ নভেম্বর ২০২৪) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে ওই দোকানে চা খেয়ে চলে যান। রাত ১টার দিকে তার চাচার দোকানে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। তার চাচা আগুনের তাপে দ্রুত দোকান থেকে বাইরে এলে আসামীর কাছে থাকা ধারালো হাসুয়া দিয়ে দোকানের সামনের রাস্তার উপরে তার চাচার মাথার পিছনে ঘাড়ে হত্যার উদ্দেশ্যে কোপ দেন। হাসুয়ার কোপে মাথার পিছনে ঘাড়ে লেগে গভীর কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। বাধা দিতে গেলে বাম হাতের কনুই ও কব্জির মাঝখানে রক্তাক্ত কাটা জখমপ্রাপ্ত হন। ডান হাতের কনুইয়ের উপরে কাধ পর্যন্ত পোড়া জখমের চিহ্ন দেখা যায়। এ সময় ছটপট করে রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। আসামী মৃত্যু নিশ্চিত করে সেখান থেকে পালিয়ে যান। আগুনে দোকনঘর ও মালামাল পুড়ে প্রায় ৮০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নিহতের আরেক ভাতিজা মৃত আব্দুল শাহের ছেলে মো. আদম আলী (৪০) জানান, দোকানে আগুন লাগার বিষয়টি টের পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এসে দেখতে পান দোকান আগুনে লেগে দোকান ঘর পুড়ছে। তার চাচার লাশ রাস্তার উপরে পড়ে আছে।
পার্শ্ববর্তী গোধড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহিম তালুকদারের ছেলে মো. ওহিদুল ইসলাম (২৮) জানান, হত্যাকান্ডের পর শোরগোল পড়লে উক্ত আসামী পালিয়ে যাওয়ার সময় রাত দোয়া ২টার দিকে তিনি ঘর হতে রাস্তায় বের হলে আসামী মো. সাহেব আলীর মুখোমুখি দেখা হয়। তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তির সময় ওহিদুলকে কোপ দিলে বাম হাতে লেগে কাটা গুরুত্বর জখমপ্রাপ্ত হন। একপর্যায়ে আসামী ওহিদুলকে বলেন, ‘একটা খুন করে আসছি, তোকেও খুন করবো।’ তখন ওহিদুলের ডাক-চিৎকারে এলাকার লোকজন তাকে তাৎক্ষনিক আটক করে পুলিশে খবর দেয়।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুজ্জামান বলেন, নিহতের ভাতিজা মো. শহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে একই গ্রামের আসামী মো. সাহেব আলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে নাটোর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.