বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

যোগদান করেই হ্যাকার প্রতারণায় ওসি

নাটোর প্রতিনিধি :
‘জাহাঙ্গীর ভাই, লালপুর থানার নতুন ওসি আমি নাসিম। আপনার নম্বরটা একজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করলাম। আমাকে কিছু হেল্প করা লাগবে।’ তারপর ৮ জন ব্যক্তির ছবি পাঠায়ে লেখেন, ‘এদেরকে চিনেন অমৃতপাড়া বাসা সবার, আনসার দেন, আপনার ব্যাপারে অনেক তথ্য আমার কাছে আছে, আমি নতুন জয়েন্ট করেছি, দুইদিন হলো, সবকিছুর তথ্য আপনার ব্যাপারে আছে আমার কাছে। এরা তো আপনার কাছ থেকে ক্যাশ আউট করে তাই তো। আমি ইমু হ্যাকারদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করবো অভিযান চলবে প্রত্যেকটা দিন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আপনি থানায় দেখা করবেন।’-একজন হ্যাকার এভাবে নাটোরের লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহম্মেদের ছবি ও পরিচয় দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন।
এ ঘনায় ডিজিটাল ডিভাইসে হোয়াটস অ্যাপে লালপুর থানার ওসির ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি ব্যবহার করে ছদ্মবেশ ধারণ করত: প্রতারণার ঘটনায় সোহেল রানা (২৬) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর ২০২৩) তাকে আদালতের মাধ্যমে নাটোর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত সোহেল রানা উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের অমৃতপাড়া গ্রামের চাঁদের আলীর ছেলে ও ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের (একাংশ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
আড়বাব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আফজালুর রহমান ও ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মনির গ্রেপ্তারকৃত সোহেল রানা ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মঞ্জিলপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক ও অমৃতপাড়া গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর হোসেন (৪৩) অমৃতপাড়া বাজারে বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করেন। রোবার দুপুরে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে থাকা অবস্থায় তাঁর ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ মোবাইল নম্বরে (০১৭৪৪৩১৩১০০) দুপুর ১.০৫ মিনিটে লালপুর থানার নতুন ওসির ছবি সম্বলিত ০১৩২৬১৫০৮৯৪ নম্বর হোয়াটসঅ্যাপ হতে মেসেজ আসে। উপরোক্ত মেসেজের প্রেক্ষিতে তিনি দুপুর ০১.১৬ মিনিটে লিখেন ‘স্যার আমি থানায়।’ তখন ঐ নম্বর থেকে জানায় যে, ‘আমি নাটোর আছি সন্ধ্যায় আসেন।’ তারপর দুপুর ০১.১৯ মিনিটে জবাবে লিখেন, ‘ধন্যবাদ স্যার।’ এরপর সন্দেহ হলে তিনি থানায় এসে ওসির সাথে দেখা করে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে নাটোরের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম পিপিএম-এর সার্বিক দিক-নির্দেশনায় লালপুর থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশের চৌকস আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযুক্ত মো সোহেল রানাকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিম ও স্মার্ট মোবাইল ফোন উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত সোহেল রানা হোয়াটস অ্যাপে লালপুর থানার ওসির ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি ব্যবহার করে ছদ্মবেশ ধারণ করত: প্রতারণা করার কথা স্বীকার করেন। বিভিন্ন প্রকার ভয়ভিতি প্রদান করে আর্থিক সুবিধা ভোগ করার চেষ্টা করেন।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহম্মেদ বলেন, এ ঘটনায় লালপুর থানায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত সোহেল রানাকে আদালতের মাধ্যমে নাটোর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য-লালপুরের কোনো এক ব্যক্তি ২০১৮ সালে এক প্রবাসীর ইমো নম্বরের দখল নিয়ে প্রতারণা করে বেশ কিছু টাকা আদায় করেন। এরপর তিনি দল ভারী করে এ কাজে নেমে পড়েন। তাঁর দেখাদেখি শুরু হয় প্রতারণার কাজ। এখন লালপুরের পাশের অনেক তরুণ-যুবকও এ কাজে নেমে পড়েছেন। র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ইমো অ্যাপ হ্যাকিংয়ের অভিযোগে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের বাড়ি লালপুরের মোহরকয়া, চকবাদকয়া, পাইকপাড়া, বিলমাড়িয়া ভাঙাপাড়া, পুরোনো বাজার, রামকৃষ্ণপুরের মোহরকয়া নতুনপাড়া, মনিহারপুর, বিলমাড়িয়া, নাগশোষা, মোহরকয়া পূর্বপাড়া, রামপাড়া, নওপাড়া গ্রামে। এই গ্রামগুলো পাশাপাশি। এখন দেশজুড়ে ইমোর মাধ্যমে প্রতারণা কেন্দ্র লালপুর।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.