বৃহস্পতিবার | ৩ অক্টোবর, ২০২৪ | ১৮ আশ্বিন, ১৪৩১

বাগাতিপাড়ায় মসজিদের ইমামকে রাজকীয় বিদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় মসজিদের ইমামকে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে রাজকীয় বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে । বিদায়বেলায় মসজিদের ইমামকে সম্মানিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় প্রশংসায় ভাসছেন এলাকাবাসী।
শুক্রবার (৩১ মে২০২৪) বাদ জুমা উপজেলার বাগাতিপাড়া ইউনিয়নের জিগরীর ক্ষিদ্রমালঞ্চি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মো. মুনছুর রহমানের (৭৫) সম্মানে ৪১ বছর ইমামতি শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে এমন বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
ইমামের বিদায়বেলায় উপস্থিত মুসল্লিরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এমন রাজকীয় সংবর্ধনা পেয়ে আবেগ আপ্লুত ইমাম সকলের জন্য দোয়া করেছেন।ইমাম মো. মুনছুর রহমান বাগাতিপাড়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা।

এলাকাবাসীরা জানান, ১৯০১ সালে ওই মসজিদটি স্থাপিত হয়। এরপর ১৯৮৩ সাল থেকে মো. মুনছুর রহমান ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ৪১ বছরে তার দায়িত্বের সময়ে মসজিদটির প্রায় সকল উন্নয়ন হয়েছে। ইমাম মুনছুর রহমানের বর্তমান বয়স ৭৫ বছর। নিজে থেকে স্বেচ্ছায় ইমামের দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতি চাওয়ায় এলাকাবাসী তার সম্মানে তাকে এই সংবর্ধনা দেন। বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইমামকে দেওয়া হয় বিভিন্ন উপহার সামগ্রীসহ ৬৮ হাজার ৮০০ টাকা। পরে তাকে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে রাজকীয় বিদায় দেওয়া হয়। এ সময় এলাকার মুরব্বিসহ সর্বস্তরের মানুষ প্রিয় ইমামকে ঘোড়ার গাড়িতে করে তার বাড়ি উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সেলিম রেজা জানান, এলাকবাসীর এমন উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। তিনি এর আগে কখনও এমন রাজকীয় আয়োজন দেখেননি। এ রকম একটি আয়োজন করায় এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
ক্ষিদ্রমালঞ্চি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সভাপতি আরশেদ আলী জানান, ইমাম মুনসুর রহমান দীর্ঘ ৪১ বছর তাদের মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করেছেন। গ্রামবাসী তার পরামর্শ নিয়ে কাজকর্ম করতেন। তিনি ছিলেন সবার অভিভাবকের মতো। গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তার পরামর্শ নেওয়া হতো। তিনি আরো বলেন, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি কর্মকর্তাসহ বেশিরভাগ পেশাতেই বিদায় বেলায় সংবর্ধনা দেয়। কিন্তু ইমামরা, যাদের সবচেয়ে বেশি সম্মান দেওয়ার কথা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের বিদায় আনন্দের হয় না‌। আমরা চাই সকল ইমাম যাতে তাদের বিদায়বেলায় সম্মানজনকভাবে বিদায় নেয়। এই আয়োজন দেখে সবাই যেন উদ্বুদ্ধ হয়।
ইমাম মো. মুনছুর রহমান জানান, জীবনের দীর্ঘ সময় তিনি এই মসজিদে ইমামতি করেছেন। সুখে-দুঃখে সব সময় গ্রামবাসীর পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডেও নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। তিনি আরো বলেন, জীবনের বেশিরভাগ সময় যাদের ইমামতি করেছি, যাদের পাশে ছিলাম, বিদায়বেলায় তাদের এমন আয়োজনে অনেক আনন্দিত আমি। আমি সবার জন্য দোয়া করব, আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.