নাটোর প্রতিনিধি :
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে নাটোরে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও জেলা বিএনপির আহবায়ক শহীদুল ইসলাম বাচ্চুসহ ৬ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার (৩ জুলাই ২০২৪) সকাল ১০টার দিকে শহরের আলাইপুরের জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে লাঠিচার্জ করলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
আহত নেতাদের মধ্যে আরও রয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, নাটোর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক চপল সাব্বির ও জেলা শ্রমিক দলের দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, পৌর বিএনপির ৫ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হিপলু।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চুকে গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে এই হামলার জন্য আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের দায়ী করা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিএনপি নেতাদের ওপর যাঁরা হামলা করেছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের কেউ নন।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন অভিযোগ করেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে যুবলীগ কর্মী রাসেদুল ইসলাম কোয়েলের নেতৃত্বে প্রায় ৩০ জন যুবলীগ কর্মী এ হামলা চালায়। তারা বিএনপি অফিসের সমাবেশ লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপসহ গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
সমাবেশে যোগ দিতে আসার সময় দলীয় কার্যালয়ের সামনে জেলা বিএনপির আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চুকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় বাচ্চুকে উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, ২০-৩০ জনের একটি গ্রুপ প্রথমে শহরের হাফরাস্তা এলাকায় জেলা শ্রমিক দলের দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলামকে পিটিয়ে আহত করে। এরপর বিএনপি কার্যালয়ের অদূরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চুকে কুপিয়ে জখম করে। পরে শহরের কানাইখালী পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক চপল সাব্বিরের মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে তাঁর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এসব ঘটনায় পূর্বঘোষিত সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের এই বাহিনী এর আগেও আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনসহ অন্তত ২০ নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায়।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, হামলাকারীরা জেলার একজন শীর্ষ সরকারদলীয় জনপ্রতিনিধির মদদপুষ্ট। তাঁদের ওই জনপ্রতিনিধির চারপাশে দেখা যায়। তাঁদের সবাই চেনে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, বিরোধী দলের সমাবেশে যারা হামলা করেছেন তারা যুবলীগের কেউ নন।
জেলা যুবলীগের আহবায়ক বাশিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া বলেন, কে বা কারা এই হামলা চালিয়েছে তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, বিএনপির ডাকা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশের সামনে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে কোনো লাভ নেই। তাই আল্লাহ ও জনগণের কাছে বিচার দিলাম।
নাটোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনার পর জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ দেননি।
পুলিশ সুপার (এসপি) তারিকুল ইসলাম বলেন, বিএনপির সমাবেশ এলাকায় আগে থেকেই পুলিশ মোতায়েন ছিল। সমাবেশে আসার পথে বিএনপির নেতাকর্মীর ওপর এসব হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ আহত অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করেছে। গুলি বা ককটেল বিস্ফোরণের কোনো ঘটনা জানা নেই। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।