নাটোর প্রতিনিধি :
নাটোরের লালপুরে পদ্মা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনকালে ৪ জনকে আটক, ৩টি ড্রেজার ও ২টি বালু ভর্তি ট্রলার জব্দ করেছে সেনাবাহিনী। আটককৃতদের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত।
শুক্রবার (২ মে ২০২৫) বিকেলে লালপুরের পদ্মা নদীর চরদিয়াড় বাহাদুরপুর এলাকায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিজুল কবিরের ভ্রাম্যমান আদালত এ আদেশ দেন।
আটকৃতরা হলেন, পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার মুন্ডুমালা গ্রামের রুস্তম খাঁর ছেলে রবিউল (৩০) ও রাকিবুল ইসলাম (২২), সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বিদকান্দি গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে খোকন (৩৫) ও ফিয়াদকান্দি গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে শাহামুদ্দিন (১৯)।
এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিজুল কবির বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় ৪ জনকে আটক, ৩টি ড্রেজার মেশিনের ব্যাটারি ও ২টি বালুভর্তি ট্রলার ও একটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। আটকৃতদের মধ্যে রবিউলকে ২ মাস এবং রাকিবুল ইসলাম, খোকন ও শাহামুদ্দিনকে ১ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. মমিনুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলেন, আটককৃত ৪ জনকে শুক্রবার সন্ধ্যায় নাটোর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল ২০২৫) দিনভর উপজেলার চরবিনোদপুরে একটি অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের আস্তানায় অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। সেখানে ছোট ছোট ঘর তৈরী করে বালু উত্তোলনকারীরা থাকার অস্থায়ীভাবে বসবাস করেছিলেন। তবে অভিযানের খবর পেয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা ড্রেজার সরিয়ে আগেই পালিয়ে যান। অবৈধ এই বালু মহল যাতে পুনরায় চালু হতে না পারে সেদিকে নজরদারী অব্যাহত রাখে সেনাবাহিনী।
স্থানীয়রা জানান, লালপুরের পদ্মা নদীতে বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও চরের মাটি বিক্রির মহোৎসব চলে আসছে। ফলে নদীরপাড় ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে এই অঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই। দিনের পর দিন প্রকাশ্যে এমন কার্যক্রম চললেও অবৈধ বালু ও মাটি উত্তোলন বন্ধে দৃশ্যমান কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি। বিভিন্ন স্থানে এখনো দৃশ্যমান অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত বালুর পাহাড়। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলেই অস্ত্র হাতে তেড়ে আসতেন সন্ত্রাসীরা। ফলে জমি থাকা সত্বেও চরে গিয়ে ফসল ফলাতে পারেনি কৃষকেরা। বালু ও মাটির বাণিজ্য কেন্দ্রীক অভ্যন্তরীণ বিবাদে পদ্মার চরে প্রায়ই গোলাগুলির ঘটনাও ঘটতো। ক্ষতিগ্রস্থদের মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসুচির পরও কোন প্রতিকার মেলেনি। তবে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে অবৈধ এই কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।