বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

বিএনপি নেতাকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ক্ষতবিক্ষত

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে যুবদলের কর্মী মাসুদ রানাকে তুলে নেওয়ার দেড় ঘণ্টা পরে হাত-পা বাঁধা ও রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর ২০২৩) রাত ১২ টার দিকে উপজেলার গোপালপুর মহিলা আদর্শ কলেজের পাশ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। আহত মাসুদ রানা উপজেলার বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নাগশোষা গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে এবং বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. তাইফুল ইসলাম টিপু গ্রুপের সক্রিয় সদস্য।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিলমাড়িয়া বাজারের সরদার টেলিকম নামে কসমেটিক্স ও বিকাশের নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে একটি সাদা মাইক্রোবাসে ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জোরপূর্বক মাসুদ রানাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তারা মাসুদ রানার চোখ ও মুখ বেঁধে নিয়ে মাইক্রোবাসের ভিতরে ডান হাতে কনুতে রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। ডান পায়ে চাকু দিয়ে ৬টি আঘাত করে ও হাঁটুর নিচে রড দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দেয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে এলোপাথাড়ি আঘাতের পর হাত-পা বেঁধে ও রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় মৃত ভেবে উপজেলা পরিষদের পাশে গোপালপুর মহিলা কলেজে সামনের খাদে ফেলে রেখে যায়। কিছুক্ষণ পর রানার জ্ঞান ফিরলে ডাক-চিৎকারে বিষয়টি সেখানকার নাইট গার্ডের নজরে আসলে এলাকার লোকজন মিলে তাকে খাদ থেকে উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় জীবিত উদ্ধার করে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুরুজ্জামান শামীম বলেন, আহত ব্যক্তির ডান হাতে কনুতে রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম, ডান পায়ে ধারালো অস্ত্রের ৬টি আঘাত ও হাঁটুর নিচে রডের আঘাতে ভেঙে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. উজ্জ্বল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বিএনপির হরতাল ও অবরোধকালে সরকার বিরোধী প্রচারণা, বিভিন্ন ধরণের সরকার বিরোধী সন্ত্রাসী কার্যক্রম, নাশকতা করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংস ও দেশের মধ্যে ভীতি এবং আতংক সৃষ্টি করার লক্ষে সমবেত হওয়ায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন এর ১৫(১)/১৫(৩) ধারার এজাহার নামীয় ১২ জন ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ১০ জনসহ আরও ২৫/৩০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। এ মামলায় ১৪ জন বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
গত ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে ফেরার পথে গত ২৯ অক্টোবর নাটোরের লালপুরের ঈশ্বরদী ইউনিয়নের পালিদেহা বাজারের পাশে ব্রিজের নিকট থেকে দক্ষিন লালপুর গ্রামের মৃত তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে লালপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হারুনার রশিদ পাপ্পু, তিলকপুর গ্রামের মৃত মসলেম উদ্দিনের ছেলে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. আব্দুস সালাম, গৌরিপুর গ্রামের মো. আবুল হোসেনের ছেলে নাটোর জেলা ছাত্রদলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল উদ্দিন, নুরুল্লাপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. রায়হান কবির সুইটসহ ১২ বিএনপি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।
গত ২৯ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের হরতালে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বাসে আগুন দিয়ে পালানোর সময় ছাদ থেকে পড়ে নিহত আব্দুর রশিদ (৩৮) নামে এক ব্যক্তি মারা যান। তিনি নাটোরের লালপুরের চংধুপইল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের নাগদহ (শোভ) গ্রামের মৃত খলিল সরদারের ছেলে। নিহত আব্দুর রশিদ ঢাকার আদাবর থানা বিএনপির ৩০ নং ওয়ার্ড বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি আদাবর থানার সাবেক যুবদল নেতা ছিলেন। তিনি আদাবরে স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে সুনিবিড় হাউজিংয়ে ভাড়া থাকতেন।
গত ৩১ অক্টোবর ভোরে ওই মামলায় উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের ভেল্লাবাড়িয়া এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ কর্মসূচিতে নাশকতা সৃষ্টির প্রস্তুতির সময় জয়নাল আবেদীন বিজয় নামে এক ছাত্র শিবির নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ভেল্লাবাড়িয়া আলিম মাদ্রাসার একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও দুড়দুড়িয়া ইউনিয়ন দক্ষিণ শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি।
একই মামলায় গত ১ নভেম্বর উপজেলার গোপালপুর পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও নারায়ণপুর গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে আইয়ুব আলীকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।
গোপালপুর পৌর বিএনপির আহবায়ক নজরুল ইসলাম মোলাম বলেন, উপজেলার বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। বর্তমানে বিএনপির নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া রয়েছেন।
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ইয়াসির আরশাদ রাজন বিএনপি নেতৃবৃন্দের গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের আটক করে হয়রানী করছে পুলিশ। অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবি জানান তিনি।
বিএনপির মানবধিকার বিষয়ক কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল বলেন, বিভিন্ন সময় গায়েবি ঘটনা সাজিয়ে গায়েবি মামলা করে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের নির্যাতন করে আসছে সরকার। বর্তমান সময়ের সব ঘটনা তার-ই পুনরাবৃত্তি।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.