শুক্রবার | ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

স্বামীর পর হারালেন ছেলে ও ছেলের বউ

নাটোর প্রতিনিধি :
বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান স্বামী বোরহান উদ্দিন মাস্টার (৭৮)। দুই সপ্তাহ পর রোববার (৩ ডিসেম্বর ২০২৩) দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণি পয়েন্টে ডুবে মারা যান তাঁর ছেলে আবুল কাশেম বকুল (৪২) ও পুত্রবধূ সাবিনুর নাহার সুমা (৩৪)। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে স্বামী, ছেলে ও ছেলের বউকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হুসনেয়ারা বেগম (৭০)। কিছুতেই তাঁর কান্না থামছে না।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, হুসনেয়ারা বেগমের চার ছেলের মধ্যে মেজ বকুল হোসেন। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। দিনাজপুরের মেয়ে ইডেন কলেজের সাবেক ছাত্রী সাবিনুর নাহার সুমাকে বিয়ে করেন। সংসারে বুশরা খাতুন (১১), আনাস আব্দুল্লাহ (৫) ও আনাস আহমেদ (৪) নামের তিন সন্তান রয়েছে। বুশরা হাফিজিয়া শেষ করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। স্কুল ছুটির কারণে সন্তানেরা দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানার নওকৈয়র গ্রামে নানাবাড়ি বেড়াতে যায়।
বকুলের ভাই আবু তাহের বলেন, কোম্পানির একটি কাজে চট্টগ্রামে গিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যান বকুল। স্ত্রী সাঁতার না জানার কারণে পানিতে তলিয়ে যান। তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে দুজনেরই মৃত্যু হয়।
বকুলের শাশুড়ি নুরুন নাহার বলেন, রোববার সকাল ৯টার দিকে তাঁর সঙ্গে শেষ কথা হয়। তখন জানিয়েছিল সমুদ্রে ঘুরতে যাবে। বেলা ২টার ট্রেনে ঢাকায় ফিরবে। পরে ফোন দিলে আর রিসিভ হয়নি। জানতে পারেন, তারা আর নেই। এখন এই ছোট বাচ্চাদের এখন কী হবে। তাদের কে দেখবে?
তিনি আরও বলেন, ছয় মাস আগে সাবিনুর নাহার সুমার বাবা মারা যান। বাসায় মন খারাপ করে থাকত। তাই দেখে স্বামী-সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন কক্সবাজার। সুমা ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে নিউ সিটি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে ১৭ সালে চাকরি ছেড়ে দেন। এখন এই ছেলেমেয়েদের দেখবে কে?
এদিকে বকুলের মা হুসনেয়ারা বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচব। আমার ছোট ছোট নাতি-নাতনিদের কী হবে।’
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আযম খান বলেন, ওই দম্পতি ছুটিতে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন। শনিবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে তাঁরা কক্সবাজারের সিগাল হোটেলের ৩২৭ নং কক্ষে ওঠেন। রোববার দুপুর ১২টার দিকে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে ঢেউয়ে ভেসে যান। পরে টুরিস্ট পুলিশের একটি দল তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
বনপাড়া পৌর মেয়র কে এম জাকির হোসেন বলেন, ‘গত ১৮ নভেম্বর বকুলের বাবা মারা যান। ছোটবেলা থেকে মেধাবী ছিল বকুল হোসেন। তাদের পরিবারের তিনজনের এভাবে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া খুব কষ্টের। তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.